মানি এক্সচেঞ্জ ব্যবসা করার নিয়ম

“মানি এক্সচেঞ্জ” এই ব্যবসাটির সাথে অনেকেই পরিচিত আবার অনেকেই অপরিচিত। এমন অনেক ব্যবসায়ী আছে যারা মানি এক্সচেঞ্জ ব্যবসা করে দিব্যি ইনকাম করে যাচ্ছেন। আবার অনেকেই মানি এক্সচেঞ্জ ব্যবসা কি? ব্যবসার নিয়ম কি ? এইসব খুঁজতে খুঁজতেই দিন পার করে ফেলছেন। মানি এক্সচেঞ্জ ব্যবসা সম্পর্কে এবং মানি এক্সচেঞ্জ  ব্যবসা করার নিয়ম সম্পর্কে যারা জানেন না আমাদের আজকের আর্টিকেলটি শুধুমাত্র তাদের জন্য। আমাদের আর্টিকেলটি সম্পূর্ণ পড়ুন এবং জেনে নিন। চলুন তাহলে দেরি না করে শুরু করা যাক –

মানি এক্সচেঞ্জ কি? 

মানি এক্সচেঞ্জ হলো  টাকা বা মুদ্রার পরিবর্তন। এক দেশের মুদ্রার সাথে  আরেক দেশের মুদ্রা পরিবর্তন করা। ধরুন, একজন ব্যক্তি পাকিস্তানের বাসিন্দা। তার কাছে রাশিয়ান রুবল আছে। এখন পুরো পাকিস্তানের মধ্যে যদি ঐ ব্যক্তি কোন কিছু কেনাকাটা করতে চায় বা খরচ করতে চায় তাহলে এই ব্যক্তি কিন্তু রাশিয়ান রুবল ব্যবহার করতে পারবেন না। এর জন্য তার পাকিস্তানের রুপিয়া প্রয়োজন। এক্ষেত্রে তিনি বিভিন্ন অনুমোদিত  এজেন্সির কাছ থেকে রুবলের পরিবর্তে রুপিয়া নিতে পারবেন। এটাই মূলত মানি এক্সচেঞ্জ। 

মানি এক্সচেঞ্জ ব্যবসা কি? 

অনেকেই ব্যবসার আইডিয়া খুঁজতে খুঁজতে মাথার চুল তুলে ফেলছেন। তাদের জন্য মানি এক্সচেঞ্জ ব্যবসা হতে পারে সাফল্যমন্ডিত। আপনি কি জানেন মানি এক্সচেঞ্জ  ব্যবসা কি? মানি এক্সচেঞ্জ ব্যবসাটা মূলত টাকার ব্যবসা বা মুদ্রার ব্যবসা। অর্থাৎ মুদ্রার বিনিময় ব্যবসা। বিভিন্ন ব্যবসা থেকে তো টাকা ইনকাম করা যায়, তো টাকার আবার ব্যবসা হয় নাকি? বিষয়টা অনেকেই হাস্যকর মনে করতে পারেন। 

মানি এক্সচেঞ্জ ব্যবসাটি মূলত কারেন্সির পরিবর্তন হিসেবে পরিচিত। আর্থিক প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে বিভিন্ন দেশের মুদ্রার সাথে দেশীয় মুদ্রার পরিবর্তন। মানি এক্সচেঞ্জ ব্যবসার মূল উদ্দেশ্য হলো বিভিন্ন দেশের সিটিজেন দের বা বিভিন্ন এজেন্সি বা বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানকে বৈদেশিক মুদ্রা পরিবর্তনের সুবিধা প্রদান করা। এর ফলে দেশীয় প্রতিষ্ঠানগুলো অন্যান্য দেশের প্রতিষ্ঠানগুলোর সাথে ব্যবসায়িক সম্পর্ক স্থাপন করতে পারে। মুদ্রার আদান প্রদান করতে পারে। এছাড়া দেশের জনগণ বিদেশে স্বাচ্ছন্দে ভ্রমন করতে পারে। 

মানি এক্সচেঞ্জের একটা নির্দিষ্ট রেট থাকে। মানি এক্সচেঞ্জ এর এই রেট নির্ভর করে একটি দেশের রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক অবস্থা ও মার্কেট ডিমান্ড(বাজার চাহিদা) এর উপর। নির্দিষ্ট এক্সচেঞ্জ রেট বা বিনিময় এর ওপর নির্ভর করে মানি এক্সচেঞ্জ ব্যবসায় মুদ্রা কেনা বেচা হয়। 

মানি এক্সচেঞ্জ ব্যবসা করার নিয়ম

মানি এক্সচেঞ্জ ব্যবসা অতটা জটিল কোন কিছু নয়। লাভজনক এই ব্যবসাটি করার ক্ষেত্রে প্রথমে কিছু নিয়ম ফলো করতে হবে – 

দক্ষতা: মানি এক্সচেঞ্জ ব্যবসা করার আগে এই ব্যবসা সম্পর্কে ভালোভাবে জানতে হবে  এবং দক্ষতা অর্জন করতে হবে। কারণ এই ব্যবসা সম্পর্কে যদি আপনার কোন জ্ঞান না থাকে, আমি যদি ভালোভাবে বুঝতে না পারেন তাহলে অবশ্যই আপনি লোকসানের সম্মুখীন হবেন। এই বিষয়ে ভালোভাবে স্টাডি করে, ভালোভাবে জ্ঞান অর্জন করে, বিস্তারিত সব কিছু বুঝে শুনে মানি এক্সচেঞ্জ ব্যবসা শুরু করতে হবে। 

মূলধন: প্রত্যেকটি ব্যবসার ক্ষেত্রেই নির্দিষ্ট অ্যামাউন্টের একটা মূলধন প্রয়োজন হয়।তেমনি  মানি এক্সচেঞ্জ ব্যবসা করার জন্য নগদ মূলধন থাকতে হবে। যার পরিমাণ অর্ধ কোটি বা  ৫০ লক্ষ টাকা হতে হবে। 

লাইসেন্স: লাইসেন্স মূলত যোগ্যতার প্রমাণ স্বরূপ। আপনি বাংলাদেশের নাগরিক কিনা, আপনার কোম্পানি বাংলাদেশের অন্তর্ভুক্ত কিনা, এইসবের জন্য আপনাকে প্রমাণ দিতে হবে। এইসব যোগ্যতার প্রমাণ দেওয়ার জন্য  আপনাকে বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে লাইসেন্স আবেদন করতে হবে। বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে মানি এক্সচেঞ্জ লাইসেন্স আবেদনের জন্য কিছু কাগজপত্রের প্রয়োজন হয়। এছাড়া আর একটা বিষয় খেয়াল রাখতে হবে কোম্পানির নামের সাথে  যেন মানি ট্রান্সফার, মানি এক্সচেঞ্জ, রেমিটেন্স এই শব্দগুলো যুক্ত থাকে।

বিশ্বস্ত সোর্স: মানি এক্সচেঞ্জ এর ক্ষেত্রে  বৈদেশিক মুদ্রার প্রয়োজন হয়। এইজন্য মানি এক্সচেঞ্জ ব্যবসায় বিশ্বস্ত সোর্স থাকতে হবে। যারা বৈদেশিক মুদ্রা আদান প্রদান করে। প্রয়োজনের সময় যেখান থেকে বৈদেশিক মুদ্রার যোগান দিতে পারবেন। 

ব্যাংক একাউন্ট: মানি এক্সচেঞ্জ ব্যবসার সব ধরনের লেনদেনের জন্য ব্যাংক অ্যাকাউন্ট থাকা খুবই জরুরী। বাংলাদেশের যত ব্যাংক আছে সব ধরনের ব্যাংকই মানি এক্সচেঞ্জের ক্ষেত্রে গ্রাহকদের  উৎসাহিত করে। মানি এক্সচেঞ্জ ব্যবসার জন্য বাংলাদেশের যেকোনো ব্যাংক থেকে একাউন্ট খুললেই হয়। 

অনুমতি পত্র গ্রহণ: মানি এক্সচেঞ্জ ব্যবসার জন্য  লাইসেন্স তৈরি ও ব্যাংক একাউন্ট খোলার পর বাংলাদেশ ব্যাংক কর্তৃক একটি অনুমতি পত্র নিতে করতে হয়। এর জন্য আবেদন  করতে হবে এবং আবেদন পত্রের সাথে সমস্ত কাগজপত্র ব্যাংকে জমা দিতে হবে। পরবর্তীতে ব্যাংক কাগজপত্র যাচাই বাছাই করে ব্যবসা শুরু করার জন্য আপনাকে একটি অনুমতি পত্র দিবে। এরপর মানি এক্সচেঞ্জ ব্যবসার বিভিন্ন রুলস রেগুলেশন মেনে আপনি ব্যবসা করতে পারবেন। 

মানি এক্সচেঞ্জ ব্যবসায় কি কি কাগজপত্র লাগে-

মানি এক্সচেঞ্জ ব্যবসায় লাইসেন্স আবেদন করতে যা যা প্রয়োজন হয় —-

  • ব্যাংক কর্তৃক আবেদন ফরম
  • পুলিশ ভেরিফিকেশনের কপি
  • মানি এক্সচেঞ্জ ব্যবসার অনুমোদন পত্রের ফটোকপি
  • জাতীয় পরিচয় পত্র
  • ভিসা ও পাসপোর্ট এর কপি
  • কোম্পানির রেজিস্টার্ড কৃত ডকুমেন্ট
  • ব্যাংক ক্লিয়ারেন্স এর কপি, 

কোন কোন ব্যাংকে মানি এক্সচেঞ্জ করা যায়? 

বাংলাদেশ ব্যাংক কর্তৃক বৈধ সব ধরনের ব্যাংকে মানি এক্সচেঞ্জ করা যায়। বর্তমানে বাংলাদেশ ব্যাংক কর্তৃক ২৩৫টি মানি চেঞ্জার প্রতিষ্ঠান বৈধতা পেয়েছে। 

অনলাইন মানি এক্সচেঞ্জ ব্যবসা 

অনলাইনের মাধ্যমে মানি এক্সচেঞ্জ ব্যবসা করা যায়। এর জন্য আগের মতই আপনাকে একটা লাইসেন্স তৈরি করে নিতে হবে। গুগলে মানি এক্সচেঞ্জ করা হয় এমন সাইটে একাউন্ট করতে হবে। অথবা নিজে ডোমেইন, ওয়েবসাইট কিনে মানি এক্সচেঞ্জ ব্যবসা করতে পারবেন। সেক্ষেত্রে ওয়েবসাইট google কর্তৃক ভ্যারিফাইড হতে হবে। তবে অনলাইনে কাজ করার ক্ষেত্রে সাবধানতা অবলম্বন করা উচিত। অনেক ব্যক্তি আছে অনলাইনে অসৎ উপায় অবলম্বন করে। 

মানি এক্সচেঞ্জ ব্যবসায় লাভ কেমন?

মানি এক্সচেঞ্জ ব্যবসা মূলত নির্ভর করে লেনদেনের ওপর। যত বেশি লেনদেন হবে ততই লাভ। ভালো করতে পারলে মাসের দেড় থেকে দুই লক্ষ টাকাও লাভ হয়। অনেক চেঞ্জার আছে যারা পরিষেবা ফির মাধ্যমে লাভ করে। আবার অনেকে আছে মুদ্রার মূল্য বৃদ্ধি পেলে মুনাফা সংগ্রহ করে। মোট কথা হলো মানি এক্সচেঞ্জ ব্যবসায় লেনদেন যত বেশি হবে মুনাফা ততো বেশি হবে। 

ব্যবসা আইডিয়া নিয়ে আরও পড়ুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *