রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধির উপায়-চমৎকার ৮টি উপায় জেনে নিন

একটি দেহ তখনই সুস্থ সবল থাকে যখন সেই দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা ভালো থাকে। রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা ভালো না থাকলে সেই দেহকে বিভিন্ন অসুখ-বিসুখ সব সময় গ্রাস করে। আমাদের আশেপাশে অনেক ব্যক্তি আছে যাদের শরীরে সব সময় কোন না কোন অসুখ লেগেই আছে। এর কারণ হচ্ছে তাদের শরীরে ইমিউনিটি সিস্টেম কম। 

রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য আমাদের বিভিন্ন উপায় অবলম্বন করতে হয় বিভিন্ন ধরনের খাবার খেতে হয়। আমাদের মধ্যে অনেকেই আছে যারা জানে না দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধির উপায় গুলো কি কি হতে পারে। আজকের লেখাটি শুধুমাত্র তাদের জন্য। মনোযোগ সহকারে আমাদের আর্টিকেলটি পড়ুন এবং  রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধির উপায় গুলো সম্পর্কে জেনে নিন –

রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বা ইমিউনিটি সিস্টেম কি?

বিভিন্ন জৈবিক  সংগঠনের সমন্বয়ে গঠিত প্রতিরক্ষা সিস্টেম যা জীবদেহকে বিভিন্ন রোগব্যাধি থেকে রক্ষা করে তাই হলো রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বা ইমিউনিটি সিস্টেম। একজন ব্যক্তির রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা যত ভালো তিনি শারীরিকভাবে ততোই সুস্থ। সংক্রামক রোগ জীবাণুগুলো তাড়াতাড়ি বংশ বিস্তার লাভ করতে পারে এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা সিস্টেমকে ফাঁকি দিয়ে দেহে প্রবেশ করার চেষ্টা করে।

রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধির উপায় কি? 

নেশা জাতীয় দ্রব্য পরিহার করা 

রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য সর্বপ্রথম ধূমপান বা সকল ধরনের নেশা জাতীয় দ্রব্য পরিহার করতে হবে। একজন স্বাভাবিক মানুষের থেকে ধূমপায়ী ব্যক্তিদের প্রতিরোধ ক্ষমতা অনেক কম থাকে। নেশা জাতীয় দ্রব্য একজন মানুষের মানসিক, শারীরিক, অর্থনৈতিক ও সামাজিক ক্ষতি করার পাশাপাশি দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে কমিয়ে বিভিন্ন বড় বড় রোগের সৃষ্টি করে। 

ভিটামিন সমৃদ্ধ খাবার খাওয়া 

ভিটামিন সমৃদ্ধ খাবার মানবদেহের জন্য খুবই প্রয়োজনীয়। রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য ভিটামিনের মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ ভিটামিন হলো ভিটামিন এ, ভিটামিন বি কমপ্লেক্স, ভিটামিন সি ও ভিটামিন ই। এছাড়া প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন এ এবং ভিটামিন সি যুক্ত ফলমূল ও শাকসবজি খেতে হবে। 

  • ভিটামিন সি যুক্ত ফল ও শাকসবজি হলো – কমলা, মালটা, আঙ্গুর, পেঁপে, আনারস, চাল কুমড়া, কাচা কলা, কাঁচা পেপে, কাঁচা আম, কাঁচা মরিচ, ফুল কপি, মিষ্টি আলু, শালগম, ডাটা করলা ইত্যাদি। 
  • ভিটামিন এ যুক্ত খাবার হলো – ছোট মাছ, দুধ, মাখন, পাকা পেপে, লাল মরিচ, পাকা টমেটো, বাঁধাকপি,  গাজর, পালং শাক, ডিম, গরুর কলিজা, আম, জাম্বুরা, ঘি ইত্যাদি। 
  • ভিটামিন বি কমপ্লেক্স যুক্ত খাবার – হলো দেশি মুরগি, সামুদ্রিক মাছ, সিম, মটরশুটি, কলা, বাদাম, গরুর মাংস ইত্যাদি।
  • ভিটামিন ই যুক্ত খাবার হলো – কুমড়া, চিনা বাদাম, সরিষার বীজ, সূর্যমুখী ও সয়াবিন তেল, পালং শাক, পেপরিকা, ইত্যাদি। 

নিয়মিত ব্যায়াম

একটি দেহকে সুস্থ স্বাভাবিক ও সবল রাখার জন্য নিয়মিত শারীরিক পরিশ্রম বা শারীরিক ব্যায়াম করার প্রয়োজন। ব্যায়াম করলে শরীরের বিভিন্ন অঙ্গ প্রত্যঙ্গ সব সময় সচল থাকে। শরীরের রক্ত চলাচলের পরিমাণ বেড়ে যায় এবং শরীরে অক্সিজেনের সরবরাহ বৃদ্ধি পায়। শরীর থেকে বাড়তি মেদ ও চর্বি ঝরে যায় এবং শরীরের ফিটনেস ঠিক থাকার পাশাপাশি মাংসপেশী ও হাড় মজবুত হয়। ব্যায়াম ও শারীরিক পরিশ্রমের মাধ্যমে শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা সঠিক থাকার পাশাপাশি বৃদ্ধি পায়। 

আরও পড়ুন: যে কারণে আয়েশ করা জরুরী – আয়েশ করার উপকারিতা

ভাত কম পরিমাণে খাওয়া 

বাংলাদেশের প্রধান খাদ্য হচ্ছে ভাত। আর বাঙ্গালীর কথা চলে আসলেই চলে আসে মাছে ভাতে বাঙালি। আমরা প্রচুর পরিমাণে ভাত খাই কিন্তু আমরা অনেকেই জানিনা যে ভাত প্রচুর পরিমাণে খেলে কি হয়। ভাতের মধ্যে শর্করা ছাড়া তেমন আর কোন কিছু নেই। অতিরিক্ত পরিমাণে শর্করা গ্রহন করলে শরীরে ফ্যাট ও চর্বি জমা হয় এতে করে দেহের ওজন বেড়ে গেলে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যাবে। একজন মানুষের দৈনিক ৬০% কার্বোহাইড্রেট বা শর্করা হলেই যথেষ্ট। তাই কম পরিমাণে ভাত খেতে হবে। 

দুগ্ধ জাত খাবার খাওয়া

শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য দুগ্ধজাত খাবার অপরিসীম। দুগ্ধজাত খাবার শরীরের ভিতরে যে উপকারী ব্যাকটেরিয়া গুলো আছে সেগুলোকে রক্ষা করে। কারণ উপকারী ব্যাকটেরিয়া না থাকলে শরীরে ক্যান্সার কোষ বাসা বাধে। বিভিন্ন দুগ্ধজাত খাবার যেমন দুধ, দই, ঘোল, ছানা। সব বয়সের লোকদের নিয়মিত দুধ পান করা উচিত কারণ সুষম খাবারের মধ্যে দুধই হচ্ছে শ্রেষ্ঠ। যেসব শিশুরা জন্মের পর ঠিকমতো দুধ পায় না তাদের অনেকেই বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হয় ও বিভিন্ন সমস্যাগুলো ভোগে। তাই রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য নিয়মিত দুগ্ধজাত খাবার খেতে হবে। 

মানসিক চাপ কমানো

মানসিক চাপের কারণে শরীরে এক প্রকার হরমোন মিশ্রিত হয় যার কারণে রক্তচাপ বৃদ্ধি পেতে পারে। এর ফলে শরীরে নানা ধরনের সমস্যা দেখা দিতে পারে। মানসিক চাপের কারণে শরীরের সবকিছু স্বাভাবিক ভাবে চলে না এর ফলে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কিন্তু কমে যায়। মানসিক চিন্তা বাদ দিতে হবে একাকীত্ব পরিহার করে বন্ধু-বান্ধবদের সঙ্গে থাকতে হবে। মানসিকভাবে সুস্থ থাকলে শরীরে কোন রোগ সহজে আক্রমণ করতে পারবে না এবং শরীরের ইমিউনিটি সিস্টেম ভালোভাবে কাজ করে। 

পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন থাকা 

পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা মানেই সুস্থ জীবন। আর সুস্থ জীবন মানেই শারীরিক, দৈহিক ও মানসিকভাবে সুস্থ থাকা। পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন থাকলে ক্ষতিকর রোগ  জীবাণু ব্যাকটেরিয়া গুলো শরীরকে আক্রমণ করতে পারে না। ময়লা অপরিচ্ছন্নতাই হলো রোগ জীবাণুর জন্য উৎকৃষ্ট। পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন থাকলে শরীরে লেগে থাকা রোগ জীবাণু ব্যাকটেরিয়া গুলো ধ্বংস হয়ে যায় এবং শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাটা সচ্ছল থাকে। 

নির্দিষ্ট পরিমাণে ঘুমানো 

একটি দেহের শারীরিক, মানসিক, জৈবিক  কাজের পর বিশ্রামের প্রয়োজন হয়। আর বিশ্রামের  জন্য প্রয়োজন ঘুমানো। একজন মানুষের সুস্থ থাকার জন্য প্রতিদিন ৬-৮ আট ঘন্টা ঘুমানো প্রয়োজন। নির্দিষ্ট পরিমাণে ঘুম না হলে শরীরের বিভিন্ন সমস্যার সৃষ্টি হয়। রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যায়।

আরও পড়ুন: দিনে ঘুমানোর উপকারিতা, দিনে ঘুমালে কি হয়?

কি কারনে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যায়? 

মানব শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যাওয়ার জন্য বিভিন্ন কারণ আছে –

  • নেশা জাতীয় দ্রব্যে আসক্ত থাকলে
  • পর্যাপ্ত না ঘুমালে 
  • ভিটামিন ও প্রোটিন সমৃদ্ধ খাবার না খাওয়ায়
  • স্ট্রেস বা ডিপ্রেশনে ভুগলে 
  • অপরিচ্ছন্ন পরিবেশে বসবাস করলে। 

রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধির ঔষধ কি? 

রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধির সবচেয়ে সহজ ও কার্যকরী উপায় হচ্ছে পুষ্টি সম্মত  খাবার। খাবারের মাধ্যমে সকল ধরনের ভিটামিন শরীরের প্রবেশ করে। রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য বাজারে অনেক ঔষধ পাওয়া যায়। এদের মধ্যে ভিটামিন ও সেলিনিয়াম যুক্ত সাপ্লিমেন্ট বেশি উপকারী। তবে একটা কথা মনে রাখতে হবে যে কোন ঔষধ সেবনের পূর্বে অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ নিবেন। 

কোন গ্রুপের রক্তের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বেশি? 

রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা একান্তই প্রত্যেক ব্যক্তির দেহের কিছু কিছু বৈশিষ্ট্যের উপর নির্ভর করে। দেহের ভেতরের অঙ্গ  সংগঠনের উপর নির্ভর করে, খাদ্যাভাসের উপর নির্ভর করে। তবে আশ্চর্যজনক হলেও সত্যি যাদের রক্তের গ্রুপ O, সেই সব ব্যক্তির রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা খানিকটা বেশি। এদের রক্তে ভাইরাস ও ব্যাকটেরিয়ার জনিত সংক্রমণের সম্ভাবনা কম থাকে। এমনকি করোনা ভাইরাস হবার সম্ভাবনাও কম। 

শিশুদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধির উপায় 

আজকের শিশু আগামী দিনে আপনার ভবিষ্যৎ, আপনার দেশের ভবিষ্যৎ। কিন্তু সেই শিশু যদি বিভিন্ন কারণে অকালে ডিজঅর্ডারে ভোগে তাহলে তার দায়ভার কিন্তু আমাদের সবার। তাই শিশুদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য আমাদের সচেতন হবে হতে হবে। 

  • ভিটামিন সমৃদ্ধ খাবার খাওয়ানো
  • পর্যাপ্ত ঘুম
  • ভ্যাকসিন সেবা নেওয়া 
  • নিয়মিত খেলাধুলার অভ্যাস করানো 
  • পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা

মন্তব্য:

এতক্ষণ আমরা আলোচনা করলাম রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধির উপায় সম্পর্কে। আশা করি আপনারা আমাদের আর্টিকেল মনোযোগ সহকারে পড়েছেন এবং বুঝতে পেরেছেন রোগ প্রতিরোধ  ক্ষমতা বৃদ্ধির উপায় গুলো কি। আর বাস্তব জীবনে কোন ওষুধ প্রয়োগের ক্ষেত্রে অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ দিবেন। ধন্যবাদ। 

স্বাস্থ্য টিপস নিয়ে আরও পড়ুন

One Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *