আল্লাহ তাআলা ইসলাম ধর্মে  ব্যবসাকে হালাল করে দিয়েছেন। আমাদের প্রিয় নবী রাসুল (সা.) বলেছেন ‘ফরজ এবাদত গুলো আদায় করার পর হালাল উপার্জনে বেরিয়ে পড় এটিও ইবাদত ”। আল্লাহ তাআলা ব্যবসা করার জন্য কিছু নিয়ম নীতি দিয়েছেন। যেগুলো অনুসরণ না করলে ব্যবসা হালাল হবে না। উপার্জনকৃত টাকা হালাল হবে না। হারাম পথের ব্যবসায়, হারাম পথের ইনকামে আল্লাহ তাআলার কোন রহমত থাকে না। আমাদের সমাজে প্রায় অনেকেই ব্যবসা করে থাকেন। কিন্তু ব্যবসার সম্পর্কে ইসলামের নিয়ম গুলো সম্পর্কে অনেকেই জানেন না। আজকের লেখাটি শুধুমাত্র তাদের জন্য। 

ইসলামে ব্যবসা করার নিয়ম সমূহ

সৎ পথে ব্যবসা

ব্যবসা করার মূল নিয়ম হলো সত্যবাদীতার সাথে সৎ পথে ব্যবসা করা। সৎ পথ আল্লাহ তাআলা যেমন পছন্দ করেন তেমনি প্রত্যেক মানুষ সত্যবাদী ব্যক্তিদের পছন্দ করেন। সততা নিয়ে ব্যবসা করলে সেই ব্যবসায় আয় রোজগার বৃদ্ধি পাবে মূলধন বৃদ্ধি পাবে। সেই ব্যবসার মধ্যে আল্লাহ তাআলা রহমত নাযিল করবেন। সৎপথ অবলম্বন না করলে ব্যবসার প্রত্যেকটি টাকা হারাম হয়ে যায়। এতে আল্লাহ তায়ালা বান্দার ওপর নারাজ হয়ে যান। সৎ পথে ব্যবসা করার কোন বিকল্প নেই। 

ওজনে কম না দেওয়া

পবিত্র কোরআনে আল্লাহ তায়ালা বলেছেন, ”আমি আকাশকে করেছি সমুন্নত, স্থাপন করেছি দাঁড়িপাল্লা, যাতে তোমরা সীমালংঘন করতে না পারো দাঁড়িপাল্লায়। তোমরা ওজনে কম দিও না। ওজনে কম দেওয়া কবিরা গুনাহ। মৃত্যুর পর ওজনে কম দেওয়া ব্যক্তির শরীর থেকে মাংস কেটে নেওয়া হবে। কেয়ামতের দিন ওজনে কম দেওয়া ব্যক্তির শাস্তি হবে ভয়াবহ। ওজনে কম দেওয়া ব্যক্তি ইহকাল ও পরকালে নিন্দনীয়। আল্লাহ তাআলা বলেন, তাদের জন্য ধ্বংস যারা ওজনে কম দেয়, যারা অন্যের কাছ থেকে মেপে নেওয়ার সময় সঠিকভাবে নেয় কিন্তু অন্যকে দেওয়ার সময় ঠকায় বা ওজনে কম দেয় “”(সূরা আল মুতাফফিফীন)।

এছাড়া আল্লাহ তায়ালা নিজেই আদেশ দিয়েছেন, মেপে দেওয়ার সময় যেন সঠিকভাবে দেওয়া হয় এবং সঠিক দাঁড়িপাল্লার ব্যবহার হয়।অন্যত্র রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “যখন কোন গোত্রের লোকজন ওজনে কম দেওয়া শুরু করে, তখন আল্লাহ তাআলা তাদের শাস্তি হিসেবে খাদ্যশস্য উৎপাদন বন্ধ করে দেন এবং তাদেরকে দুর্ভিক্ষ গ্রাস করে “” ব্যবসায় একটি হালাল পেশা আমাদের নবী-রাসূলগণ ব্যবসা করতেন। তারা কখনো ওজনে কম দিতেন না। মানুষ অতিরিক্ত লোভ লালসা পড়ে অবৈধ পথে ব্যবসা করার কথা চিন্তা করে। যা সমাজের জন্য একটি জঘন্য অপরাধ। এজন্য পরকালে কঠিন শাস্তির মুখোমুখি হতে হবে। 

মিথ্যা অঙ্গীকার না করা

ব্যবসার ক্ষেত্রে মিথ্যার আশ্রয় নেওয়া যাবে না। ক্রেতাদেরকে মিথ্যা অঙ্গীকার করা যাবে না। মাঝে মাঝে দেখা যায় ক্রেতাগণ খারাপ পণ্য সহজেই বিক্রি করার জন্য ক্রেতাদের কাছে নানা ধরনের অঙ্গীকার করে থাকেন, পণ্যটি  নেওয়ার জন্য নানা ধরনের লোভনীয় অফার বলেন। এতে করে  সহজেই ক্রেতা পণ্যটি কিনে নেয় এবং পরবর্তীতে ক্ষতির সম্মুখীন হয়। এটি একটি অপরাধমূলক কাজ। 

মহান আল্লাহ তাআলা মিথ্যা অঙ্গীকারকারীদের পছন্দ করেন না। মিথ্যে অঙ্গীকারকারী মুসলমানের দুশমন। মহান রাব্বুল আলামিন বলেছেন “”তোমরা সত্য মিথ্যা একসঙ্গে মিশ্রিত করবে না, জ্ঞানত সত্য গোপন করবে না””।

ক্ষতি করা যাবেনা

ব্যবসা করার ক্ষেত্রে কারো ক্ষতি করা যাবে না। একটা বিষয় ভালো করে লক্ষ্য রাখতে হবে, যেন আমার দ্বারা কখনো কারো ক্ষতি না হয়। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন নিজে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়া ও অন্যকে ক্ষতিগ্রস্ত করা কোনটিই উচিত নয়। তাই ব্যবসার ক্ষেত্রে খেয়াল রাখতে হবে আপনার দ্বারা যেন কারো ক্ষতি না হয়। প্রতির উদ্দেশ্যে ব্যবসা করলে বা ক্ষতি করার মন মানসিকতা থাকলে সে ব্যবসা হালাল হবে না।

ব্যবসায় সুদের কারবারি বন্ধ করতে হবে

মহান রাব্বুল আলামিন ইসলামে সুদ ও ঘুষকে হারাম করে দিয়েছেন। সুদ এমন একটা জঘন্য কাজ যা করলে আল্লাহ তাআলা ওই ব্যক্তির নামাজ পর্যন্ত কবুল করেন না। পরকালের সুদখোরের শাস্তি ভয়াবহ। নবী মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সুদ ও ঘোষ  থেকে আমাদের দূরে থাকতে বলেছেন। আমাদের সমাজের নাম করা অনেক ব্যবসায়ী আছেন অধিক লোভের আশায,  অধিক মুনাফার আশায় ব্যবসার মধ্যে সুদের কারবারি শুরু করে। বাকিতে পণ্য সরবরাহ করে পরবর্তীতে সেই পণ্যের নির্ধারিত মূল্যের থেকে বেশি পরিমাণ মূল্য সুদ হিসেবে গ্রহণ করে। 

যে ব্যবসার মধ্যে সুদ আছে সেই ব্যবসা হারাম। সুদ যুক্ত ব্যবসাকে ইসলাম সমর্থন করে না। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন “সুদ সম্পদ বৃদ্ধি করলেও এর শেষ পরিণতি হবে স্বল্পতা “”। রাসুল (সা.) সুদ প্রদানকারী, সুদ গ্রহণকারী,সুদ হিসাব কারি ও সাক্ষী সকলের প্রতি অভিশাপ দিয়েছেন। আল্লাহ তাআলা বলেছেন, “যারা সুদ গ্রহণ করে, কিয়ামতের দিন তারা শয়তানের আসরে জায়গা পাবে ” তাহলে বুঝতেই পারছেন সুদ কত ভয়ানক। তাই আমাদের ব্যবসার ক্ষেত্রে সুদের ব্যবহার করা যাবে না। ইসলামের নিয়ম অনুযায়ী ব্যবসা করলে অতি তাড়াতাড়ি সফলতা পাওয়া যাবে। ব্যবসা হবে বরকতময়।

হিংসাত্মক মনোভাব নিয়ে ব্যবসা করা যাবে না

হিংসা মানুষকে ধ্বংস করে দেয় এবং  নিজের অস্তিত্বকে নষ্ট করে দেয়। ব্যবসা করার ক্ষেত্রে হিংসাত্মক মনোভাব থাকা যাবে না। ব্যবসা করার সময় আমরা একসঙ্গে অনেকেই ব্যবসা করি। এক্ষেত্রে কেউ যদি ব্যবসায় ভালো সফলতা পায় তার জন্য আমাদের অনেক হিংসা হয়, আমাদের সহ্য হয় না।কিন্তু আমাদের জানতে হবে আল্লাহ তাআলা হিংসা কারী কে পছন্দ করেন না। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, যে ব্যক্তি হিংসা করে তার কোন ঈমান নেই অর্থাৎ ঈমান ও হিংসা একসাথে কোন ব্যক্তির ভেতরে থাকতে পারে না। 

আমাদের প্রিয় নবী কারিম (সা.) হিংসা থেকে দূরে থাকতে বলেছেন কারণ হিংসা মানুষের ঈমান ও আমল কে নষ্ট করে দেয়। আল্লাহর পথ থেকে দূরে সরে দেয়। ব্যবসায়ের ক্ষেত্রে হিংসাত্মক মনোভাব নিয়ে ব্যবসা করলে ব্যবসা হারামের পথে চলে যায়। আল্লাহ তাআলা নারাজ হয়ে যান এবং বান্দার উপর থেকে রহমত তুলে নেন।

ব্যবসায়ে ধোকাবাজি করা যাবে না

ধোকাবাজি করে ব্যবসা করলে সেটা ইসলামবিরোধী। ইসলাম ধোঁকাবাজি করা এবং ধোকাবাজকে সমর্থন করে না। শুধু ব্যবসা করলেই হবে না ব্যবসার যে ইসলামিক নিয়ম আছে সেগুলো মেনে ব্যবসা করতে হবে। বর্তমানে ব্যবসায়ীরা নানাভাবে ধোঁকাবাজি করে থাকে। অনেক সময় দেখা যায় ডেট এক্সপায়ার পণ্যের গায়ে নতুন ডেট যুক্ত করে সেটা আবার বিক্রি করা হয়। বর্তমান সময়ে মাংসের বাজারে দেখা যায় অনেকদিনের freezing করা মাংস পানি দিয়ে ধুয়ে চকচকে করে চড়া দামে সেগুলো বিক্রি করা হচ্ছে। দেখে বোঝার উপায় নাই যে বাসি মাংস। আবার অনেক সময় বিক্রেতারা বেশি মুনাফা পাওয়ার জন্য দেশীয় পণ্যের গায়ে অন্য দেশের সিল লাগিয়ে, অন্য দেশের নাম করে বিক্রি করে। এতে করে ক্রেতাগণ বুঝতে পারে না যে তাদের সঙ্গে ধোঁকাবাজি করা হচ্ছে।

ইসলামিক নিয়ম অনুযায়ী ব্যবসা করার সুফল 

আল্লাহ তাআলা আমাদের পৃথিবীতে পাঠিয়েছেন বিভিন্ন নিয়ম কানুন মেনে তার ইবাদত করার জন্য। হালাল পথে উপার্জন করা, হালাল পথে ব্যবসা করাও একটা ইবাদত। পৃথিবীটা একটা পরীক্ষা ক্ষেত্র আর এই পরীক্ষা ক্ষেত্রের সব প্রশ্নের উত্তর আল্লাহ তাআলা দিয়ে দিয়েছেন। 

ব্যবসা করতে হবে সততা ও তাকওয়ার সহিত। যে ব্যক্তি দুনিয়ায় হালাল পথে উপার্জন করবে ইসলামের নিয়ম অনুযায়ী ব্যবসা করবে ওজনে কম দিবে না তার জন্য জান্নাতে আছে পরম সুখ শান্তি। দুনিয়া তার জন্য রয়েছে মর্যাদা সম্মান এবং তার ব্যবসায়ের মধ্যে তার মূলধনের মধ্যে আল্লাহ তায়ালার রহমত বর্ষিত হবে। আল্লাহ তাআলা হাশরের ময়দানে সৎ ব্যবসায়ীদের নবীদের সঙ্গে রাখবেন।

মন্তব্য

আমরা আলোচনা করলাম ব্যবসার সম্পর্কে ইসলাম কি বলে ইসলামে ব্যবসার নিয়ম গুলো কি। আবার আমাদের আর্টিকেলে স্পষ্ট ভাবে ধারণা দিয়েছি। আশা করছি আপনারা পূর্ণ মনোযোগ সহকারে পড়েছেন এবং আমাদের কথাগুলো বুঝতে পেরেছেন। ব্যবসা সম্পর্কে যদি আপনাদের আরো কোন তথ্য জানার থাকে তাহলে আমাদের কমেন্ট করবেন, আমরা গুরুত্ব সহকারে আপনার প্রশ্নের উত্তর দিয়ে দিব।

আরও পড়ুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *