তুলসী পাতার উপকারিতা

তুলসী পাতা এই শব্দটা কম বেশি সবার কাছেই সস্তা সস্তা মনে হয়। অনেকেই আবার এটাকে আগাছা বা ঝোপঝাড় মনে করে কেটে ফেলেন। কিন্তু আমরা অনেকেই জানি না যে, তুলসী গাছ হল “Queen of Hurb” অর্থাৎ ভেষজের রানী। তুলসী পাতার বিভিন্ন গুনাগুনের জন্যই তাকে এই নামে ডাকা হয়।
হিন্দু সম্প্রদায়ের মধ্যে তুলসী গাছকে পবিত্র কাজ বলা হয় এবং এর পূজা করা হয়। তুলসী গাছ মাঝারি আকারের গাছ। গাছে প্রচুর পরিমাণে পাতা থাকে। ছাদে টবে, বারান্দায়, বাড়ির আনাচে-কানাচে,আঙিনায় তুলসী গাছ লাগানো যায়। এই গাছের গুনাগুন খুব কিন্তু এর পরিচর্যার প্রয়োজন হয় না। আজকে আমরা জানবো তুলসী পাতার উপকারিতা কি এবং অপকারিতা কি?

তুলসী পাতার উপকারিতা

তুলসী পাতা হল গুনাগুন সমৃদ্ধ পাতা। এর অনেক উপকারিতা আছে। তুলসী পাতার মাধ্যমে আমরা যে উপকার গুলো পেয়ে থাকি তা হল –

জ্বর উপশম: তুলসী পাতার ব্যবহার সবচেয়ে বেশি দেখা যায় গ্রাম অঞ্চলে। তুলসী পাতা সব সময় হাতের নাগালেই পাওয়া যায়। এটা জ্বরের উপশম হিসেবে কাজ করে। জ্বর হলে তুলসী পাতা বাটা করে খেলে জ্বর ভালো হয়ে যায়। এছাড়া তুলসী পাতার রস করেও খাওয়া যায়।

সর্দি কাশির সমাধান: সর্দি কাশি হলে তুলসীপাতার কোন বিকল্প নেই। সর্দি কাশির কবলে পড়ে কম বেশি সবাই তুলসী পাতার রস বা তুলসী পাতা বাটা করে খেয়ে থাকেন। এটা একটা প্রচলিত বিষয়। এটা সবাই জানে যে, সর্দি কাশি হলে তুলসী পাতা বেশ উপকারী। তাই সর্দি কাশির সমস্যায় তুলসী পাতা হতে পারে কার্যকরী সমাধান।

পেটের সমস্যায় সমাধান: পেটের সমস্যায় তুলসী পাতা বেশ উপকারী। পেট ফাঁপা, হজম শক্তি কমে যাওয়া, কোষ্ঠকাঠিন্য, পেট ব্যথা,আলসার এছাড়া পেটের আরো সমস্যা হয় তুলসী পাতা ওষুধ হিসেবে কাজ করে। কয়েকটি তুলসী পাতা সহ পানি গরম করে সেই পানি পান করলে ভালো ফলাফল পাওয়া যায়।

রক্ত জমাট বাধা রোধ করে: বিভিন্ন কারণে অনেক সময় মানব শরীরে রক্ত যাওয়ার বাঁধে। ফলে রক্ত চলাচল বন্ধ হয়ে যায় এবং বিভিন্ন সমস্যার সৃষ্টি হয়। এই সমস্যায় তুলসী পাতা খেলে রক্ত জমাট বাধা বন্ধ হয়ে যায়। রক্ত চলাচল স্বাভাবিক হয়। তাই রক্ত জমাট বাঁধলে তুলসী পাতা খাওয়া উচিত।

মাথা ব্যথার সমাধান: অতিরিক্ত মাথাব্যথা হলে তুলসী পাতার রস ও আদা চা খান। দেখবেন কিছুক্ষণের মধ্যেই মাথা ব্যথা কমে গেছে।

ক্যান্সার উপশম এ সহায়তা করে: বর্তমান বিশ্বে ক্যান্সারের সঠিক কোন ঔষধ না থাকায় একমাত্র অবলম্বন হল এর উপশম বা প্রতিরোধ। ক্যান্সার প্রতিরোধে তুলসী পাতা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। তুলসী পাতায় ক্যান্সার উপশমের এন্টিবডি থাকে।তুলসী পাতায় থাকে রেডিওপ্রটেক্টিভ, যা ক্যান্সারের উৎপাদক টিউমার কোষকে ধ্বংস করতে পারে। তাই ক্যান্সার প্রতিরোধের তুলসী পাতা রস করে বা বেটে খাওয়া উচিত।

শারীরিক সমস্যার কার্যকরী সমাধান: শারীরিকভাবে কোন সমস্যায় পড়লে আমরা সাধারণত সেটা বলতে পারি না। এর ফলে হাতের নাগালেই ওষুধ থাকা সত্ত্বেও সেটা আমরা ব্যবহার করতে পারি ন। অবিবাহিত মেয়েদের ক্ষেত্রে সাধারণত বিভিন্ন সমস্যা হয়। যেমন-অনিয়মিত পিরিয়ড, পিরিয়ড হলে রক্তপাত বন্ধ না হওয়া, মাসিক দীর্ঘদিন না হওয়া, অতিরিক্ত ব্যথা হওয়া। এসব সমস্যার সমাধানের তুলসীর শিকড় খুবই প্রয়োজন। এছাড়া তুলসীর বীজ পুরুষের শরীরে বীর্যের পরিমাণ বাড়িয়ে দেয়। কারণ তুলসীর বীজে ক্যালসিয়াম থাকে।

মুখের দুর্গন্ধ রোধ করে: স্বাচ্ছন্দে কথা বলার জন্য প্রয়োজন মুখের দুর্গন্ধ রোধ করা। মুখের দুর্গন্ধ রোধ করতে তুলসী পাতার ভূমিকা অপরিসীম। তুলসী পাতা গুঁড়ো করে পাউডার করতে হবে। সেই পাউডার দাঁতের মাজন হিসেবেব্যবহার করলে মুখের দুর্গন্ধ রোধ হয়। সেই সাথে দাঁতের মাড়ি শক্ত হয়। দাঁতের ক্ষয় রোধ ও ব্যথা কমায়। এছাড়া দাঁতের মাড়ি ফুলে যাওয়া রোধ করে।

এলার্জি রোধ করে: বর্তমান বিশ্বে শতকরা প্রায় ৮০ ভাগ লোকের এলার্জি। এলার্জি সমস্যার সমাধান হলো তুলসী পাতা। তুলসী
পাতা পানিতে গরম করে গোসল করলে এলার্জির পরিমাণ অনেকটা কমে যায়। এছাড়া তুলসী পাতা বিভিন্ন ধরনের চর্মরোগ এর মহাঔষধ।

চুল পড়া বন্ধ করে: চুল পড়া এবং চুল পেকে যাওয়া এটা সবার জন্য একটা বহুল সমস্যায় পরিণত হয়েছে। চুল পড়া রোধে তুলসী পাতার রস বেশ উপকারী।

তুলসী পাতার অপকারিতা

যে কোন জিনিসের উপকারিতার পাশাপাশি কিছু উপকারিতা থাকে। তেমনি তুলসী পাতার বহুল উপকার থাকলেও এর কিছু অপকারিতা আছে।

  • তুলসী পাতা বেশি পরিমাণে খেলে রক্ত চলাচল বেশি পরিমাণে বেড়ে যায়। রক্ত পাতলা হয়ে যায় এবং রক্ত জমাট বাধা বন্ধ হয়ে যায়। এর ফলের নাক মুখ দিয়ে রক্ত পড়ার সম্ভাবনা থাকে। তাই তুলসি পাতা প্রয়োজন এর চেয়ে বেশি খাওয়া উচিত নয়।
  • গর্ভাবস্থায় নারীদের তুলসির পাতা খাওয়া একদমই উচিত নয়। কারণ এতে জরায়ুর সংকোচন হতে পারে
  • ডায়াবেটিস রোগীদের তুলসির পাতা বেশি খাওয়া উচিত নয়। নয়তো বিপরীত কিছু হতে পার

আমাদের কিছু কথা

আমরা এতক্ষণ আলোচনা করলাম তুলসী পাতার উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে। আমরা চেষ্টা করেছি তুলসী পাতার উপকারিতা ও অপকারিতার খুঁটিনাটি বিষয়গুলো আপনাদের মাঝে উপস্থাপন করতে তো এখন হয়তো নিশ্চয়ই আপনারা বুঝতে পারছেন তুলসী পাতা একটি মহাঔষধ। এছাড়া কোন ক্ষেত্রে তুলসী পাতা পরিহারযোগ্য তাও আপনারা বুঝতে পারছেন। আমাদের আর্টিকেলটি যদি আপনাদের ভালো লাগে তাহলে শেয়ার করবেন। যদি আরো কোন কিছু জানার থাকে তাহলে অবশ্যই কমেন্ট করবেন।

আরও পড়ুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *