মধু খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা,খাওয়ার নিয়ম
মধু হচ্ছে একটি তরল আঠালো মিষ্টি জাতীয় পদার্থ। যা মৌমাছিরা বিভিন্ন ফুল থেকে সংগ্রহ করে মৌচাকে সংরক্ষণ করে। মধু আমাদের শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে। মধু এতটাই মিষ্টি হয় যে কিছু কিছু মানুষ চিনির পরিবর্তে মধু ব্যবহার করে থাকে।
মধু খেলে কী কী উপকার হয়?
নীচে আমি বেশ কিছু পুষ্টিগুণ ও উপকারিতা মধু খাওয়ার নিয়ম সম্পর্কে আলোচনা করেছি। যাতে আপনারা মধু সম্পর্কে ভালো একটা ধারণা পান আমার এই লেখাগুলো পড়তে পারেন মধু সম্পর্কে জানার জন্য।
মধু খাওয়ার উপকারিতা
রোগ প্রতিরোধশক্তি বাড়ায়: আমি প্রথমেই যে উপকারিতা সম্পর্কে বলতে চাই সেটা হল মধুর প্রধান বৈশিষ্ট্য রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করা। মধু তাপ ও শক্তির উৎস যা শরীরের ভেতরের বিভিন্ন ব্যাকটেরিয়া মেরে দেহকে সুস্থ-সবল রাখতে সাহায্য করে।
অন্তঃসত্ত্বা নারীদের জন্য মধু: মধুতে বিভিন্ন ধরনের ব্যাকটেরিয়া নাশক উপাদান বিদ্যমান রয়েছে যাতে একজন অন্তঃসত্ত্বা নারীর জন্য গুরুত্বপূর্ণ। এছাড়াও চিকিৎসকদের মতে জানা গেছে যে অন্তঃসত্ত্বা নারীদের জন্য মধু বেশ উপকারী। অন্তঃসত্ত্বা নারীদের জন্য বিশেষ গুণ গুলো:
ওজন কমাতে: আপনি কি জানেন মাত্র তিন সপ্তাহ মধু সঠিক নিয়মে পান করলে আপনার ওজন হ্রাস পাবে? কেননা মধুতে রয়েছে বিভিন্ন গুনাগুন এটি রূপচর্চা থেকে শুরু করে সুস্বাস্থ্যের জন্য বেশ কার্যকরী। সামান্য গরম পানির সাথে মধু মিশিয়ে খাওয়া স্বাস্থ্যের জন্য বেশ উপকারী। অনেক মানুষ আছে যারা প্রতিদিন সকাল বেলায় এক গ্লাস গরম পানির সাথে সামান্য পরিমাণ মধু মিশিয়ে নিয়মিত খান। তাহলে তাদের ওজন যদি স্বাভাবিকের তুলনায় বেশি থাকে ওজন কমে স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসবেন।
অরুচি ভাব: বর্তমানে অরুচি সমস্যা বেড়েই চলেছে অনেক মানুষ আছে যারা অল্পতেই হাঁপিয়ে ওঠেন বেশি খেতে পারেন না তাদের জন্য মধু বেশ কার্যকরী। মধু মুখে রুচি ও খাবারের চাহিদা বৃদ্ধি করে।
বমিভাব: অনেক মানুষ আছেন যাদের বমি বমি ভাব হয়। আপনারা যদি মধু খান তাহলে বমি বমি ভাব দূর হবে কারণ মধু মিষ্টি জাতীয় জিনিস মুখের বিভিন্ন ধরনের ব্যাকটেরিয়া দূর করে এবং বমি ভাব কমায়।
অম্বলের সমস্যা থেকে মুক্তি: যাদের গ্যাস অম্বল এর সমস্যা আছে তারা প্রতিদিন সকালবেলা খালি পেটে মধু পান করে গ্যাস অম্বল থেকে পরিত্রান পাবেন।
গ্যাসট্রিক ও আলসারে: গ্যাস্ট্রিক ও আলসারের সমস্যা অনেক বড় ধরনের সমস্যা গ্যাস্ট্রিকের সমস্যায় ভোগেন না এমন মানুষ খুঁজে পাওয়া যাবে না। এর জন্য মানুষ বিভিন্ন ধরনের মেডিসিন ব্যবহার করে এতে করে গ্যাস্ট্রিক ও আলসারের সমস্যা দিন দিন বেড়েই যায় মানুষ জানে না যে মধু সেবন করলে গ্যাস্ট্রিক ও আলসার থেকে মুক্তি পাওয়া যায়।
কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে: ভিটামিন বি-কমপ্লেক্স মধুর একটি বিশেষ উপাদান আর বি-কমপ্লেক্স কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে বিশেষ রাখে।
পাকস্থলীর সুস্থতায় ও হজমের সমস্যা: পাকস্থলীর জন্য মধু খুবই কার্যকরী এটি নিয়মিত গরম পানির সাথে মধু মিশিয়ে পান করলে পাকস্থলীর খাদ্যদ্রব্য সহজে হজম হতে সাহায্য করে তাই নিয়মিত পান করায় আপনার পাকস্থলী সুস্থতা ও হজম শক্তিশালি হয় এর ফলে আপনি ক্ষুধা অনুভব করবেন
হাঁপানি ও শ্বাসকষ্ট নিয়ন্ত্রণে: হাঁপানি ও শ্বাসকষ্ট নিয়ন্ত্রণের জন্য আদা গ্রাম গুঁড়ো করা গোলমরিচের সাথে সমপরিমাণ মধু মিশ্রিত করে দিনে তিনবার সেবন করুন। এতে হাঁপানি ও শ্বাসকষ্ট থেকে একটি হলেও আরাম অনুভব করবেন।
হৃদরোগের সমস্যার জন্য: হৃদরোগের জন্য মধু বেশ উপকারী। অল্প একটু গুড়ের সাথে 1 চা-চামচ মধু মিশিয়ে খেলে যাদের হূদরোগ আছে তারা একটু হলে আরাম অনুভব করবেন করবেন।
পানিশূন্যতা দূর করতে: পানিশূন্যতা দূর করতে মধু খেতে পারেন কারণ মধু শরীরে পানির যোগান দিয়ে শরীর সতেজ ও প্রাণবন্ত রাখতে সাহায্য করে।
ডায়রিয়া আমাশয়ে মধু: ডায়রিয়া আমাশয় থেকে স্বাভাবিক ভাবে সুস্থ হওয়ার জন্য 1 লিটার পানিতে 50 মিলিলিটার মধু মিশিয়ে পান করুন এতে আপনারা ডায়রিয়া থেকে একটু হলেও আরাম অনুভব করবেন।
রক্তনালী পরিষ্কার: এক গ্লাস পানিতে 2 চা চামচ মধু এবং এক চামচ লেবুর রস মেশান আর এই মিশ্রণটি প্রতিদিন সকাল বেলায় খালি পেটে পান করুন। নিয়মিত এই মিশ্রণ পান করায় আপনার রক্ত ও রক্তনালী পরিষ্কার করতে সাহায্য করবে।
কোলেস্টেরলের ক্ষেত্রে: নিয়মিত মধু সেবন করলে কোলেস্টেরলের মাত্রা 10 শতাংশ কমে যায় এতে মানুষের হার্ট ভালো থাকে। আর হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি থাকে বাঁচবেন।
রক্ত উৎপাদনে: রক্ত উৎপাদনে আয়রন এর খুব প্রয়োজন আর মধুতে তা বিদ্যমান রয়েছে। রক্তের লোহিত কণিকা শ্বেতকণিকা গড়ে তুলতে আয়রন বেশ গুরুত্বপূর্ণ।
অনিদ্রায় জন্য: মধু অনিদ্রার জন্য বেশ ভালো কাজ করে যাদের ঠিকমতো ঘুম হয়না তারা প্রতিদিন ঘুমাতে যাওয়ার আগে মধু খেতে পারেন। রাতে ঘুমানোর আগে এক গ্লাস পানিতে 1 চা-চামচ মধু মিশিয়ে পান করলে অনিদ্রার জন্য ভালো কাজ করে।
শারীরিক দুর্বলতা দূর করতে: আমাদের দেশে অনেক মানুষ আছে যারা শারীরিক দুর্বলতা ভোগে শরীরে শক্তি কম, ক্লান্তিবোধ কোন কিছু ভাল লাগেনা। মস্তিষ্ক ও মন মানসিকতা ঠিক থাকেনা কোন কাজে মন বসে না এর জন্য প্রধান কারণ শারীরিক দুর্বলতা। তাই এই শারীরিক দুর্বলতা দূর করতে প্রতিদিন নিয়মিত মধু সেবন করুন। মধুতে বিভিন্ন ধরনের ভিটামিন মিনারেল অন্তর্ভুক্ত রয়েছে যাতে মানুষের ব্রেন ও শক্তি বৃদ্ধি পায় ও রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে।
তাপমাত্রা বাড়াতে: অনেক সময় যারা শারীরিক দূর্বলতায় ভোগেন এবং মাঝে মাঝে শরীর কাপুনি দেয় শরীরের তাপমাত্রা কমে যায় তাদের জন্য বেশ কার্যকরী। এছাড়াও শীতের সময় মধু সেবন করলে শরীরে তাপমাত্রা বৃদ্ধি পায় রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ে। শীতকালে প্রতিদিন সকাল বেলায় মধু সেবন করলে শরীর ঝরঝরে ও তাজা থাকে।
সর্দি, কাশি ও স্বরভঙ্গের ক্ষেত্রে: মধুতে বিভিন্ন ব্যাকটেরিয়া প্রতিরোধী উপাদান বিদ্যমান রয়েছে এছাড়াও এর মধ্যে তাপমাত্রা বিদ্যমান তাই সর্দি কাশি স্বরভঙ্গ হলে মধু সেবন করুন আরাম অনুভব করুন। বাচ্চাদের ক্ষেত্রে এটি বেশ কার্যকর।
গলার স্বর: নিয়মিত মধুপান করলে গলার স্বর সুন্দর ও সুস্পষ্ট হয়
যৌন দুর্বলতায় ক্ষেত্রে: যৌন দুর্বলতার ক্ষেত্রে মধুর গুরুত্ব অপরিসীম এ রোগটি সাধারণত সব বয়সী মানুষের হয়ে থাকে। সঠিক নিয়মে মধু সেবন করলে এই রোগ থেকে পরিত্রান পাওয়া যায় এর জন্য আপনাকে মধুর সাথে বিভিন্ন উপাদান মিশ্রিত করে প্রতিদিন সেবন করতে হবে। যেমন রসুন,কালোজিরা, মধু, মিশ্রিত করে সেবন করলে আপনার স্বাস্থ্য সুন্দর সুগঠিত হবে। যেমন: পেশিশক্তি, শারীরিক শক্তি, কাম শক্তি,যৌন দুর্বলতা মুক্তি পেতে পারেন।
শরীরের বিভিন্ন ব্যথায়: আজকাল আমাদের দেশে ব্যাথা সমস্যাটা অনেক বড় ধরনের রূপ নিয়েছে ছোট-বড় সব বয়সী মানুষের মাঝে এই সমস্যাটা দেখা দেয়। যেমন জয়েন্ট, হাটুতে, ঘারে, কোমড়ের, পিঠে, ব্যথা অনুভব করে এর কারণ হলো শরীরের অবাঞ্চিত রস। আর এই রস বেশি পরিমাণে হলে বাতব্যথায় রূপান্তরিত হয়। মধু এই রস শরীর থেকে অপসারণ করতে সাহায্য করে তাই মধু পান করে ব্যাথা থেকে পরিত্রান পেতে পারেন।
পেশিশক্তি বৃদ্ধিতে: মানুষের কাজ করার জন্য সঠিক শক্তি ও ব্যায়ামের প্রয়োজন আর এর জন্য মধু গুরুত্বপূর্ণ। কারণ মধু শরীরের শক্তি বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে বিশেষ করে যুবকদের একটি বয়সে পেশী শক্তি বৃদ্ধি হয়। আর সে সময় সঠিক নিয়মে মধু পান করলে পেশিশক্তি পর্যাপ্ত পরিমাণে বৃদ্ধি হতে থাকে।
হাড় ও দাঁতের যত্নে: দাঁত ও হাড়ের গঠনে ক্যালসিয়াম এর গুরুত্ব অপরিসীম। কারণ ক্যালসিয়াম দাঁত চুলের গোড়া ও নখের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি করে যা মধুর মধ্যে বিদ্যমান।
ঠোঁট ফাটা ও মুখের ঘা সারাতে: সাধারণত শীতকালে বেশিরভাগ মানুষের ঠোঁট ফাটা ও মুখের ভিতর ঘা হয়। মুখের ঘা সাধারণত ভিটামিন বি এর অভাবে হয় যা মধুতে ভিটামিন বি কমপ্লেক্স বিদ্যমান রয়েছে।
বুদ্ধি বাড়ে: স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধিতে মধু বেশ কার্যকরী। এতে বিভিন্ন ধরনের গুণসম্পন্ন উপাদান বিদ্যমান রয়েছে রাতে শোয়ার আগে মধু খেলে এটি মস্তিষ্কের কার্যক্ষমতা বৃদ্ধি করে এবং বুদ্ধি বাড়ে।
দৃষ্টি শক্তি বৃদ্ধিতে: দৃষ্টি শক্তি বৃদ্ধিতে সব ধরনের ভিটামিন ও মিনারেলের প্রয়োজন রয়েছে যা মধুর মধ্যে আছে। দৃষ্টিশক্তি বৃদ্ধির জন্য নিয়মিত মধু পান করুন।
মসৃণ চুল পেতে ব্যবহার করুন মধু
সঠিক নিয়মে চুলে মধু ও কালোজিরা ব্যবহার করলে চুলের আদ্রতা বজায় থাকবে। কেননা মধুতে রয়েছে প্রাকৃতিক গুণসম্পন্ন কিছু উপাদান যা এটি বাতাস থেকে আদ্রতা নিয়ে আপনার চুলে বা তোকে ধরে রাখে। এর বিভিন্ন উপাদান চুলের ভেঙে যাওয়া রোধে সাহায্য করে রুক্ষতা দূর করে চুল সবল ও মজবুত করে। এতে ব্যাকটেরিয়া রোদি এবং জীবাণুমুক্ত গুণাবলী রয়েছে। কারণ মধু অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল গুণসম্পন্ন মাথার স্কাল্পে ইনফেকশন প্রতিরোধে কাজ করে যেমন চর্মরোগ খুশকি ও সোরিয়াসিস সমস্যার মোকাবেলা করে।
চুলের গ্রন্থিকোষ পরিষ্কার করবে চুলের গ্রন্থিকোষ শক্তিশালী করার পাশাপাশি গ্রন্থি কোষ থেকে সকল প্রকার অবিশুদ্ধতা পরিষ্কার করে দেয়। কেন মধু একটি বড় উপকারিতা কারণ হচ্ছে গ্রন্থিকোষ অবিশুদ্ধতা চুল পড়তে শুরু করে তাই এটি চুল পুনরায় গজাতে সাহায্য করবে। এছাড়াও চুলের বৃদ্ধি জোরদার করতে সাহায্য করে এটি সুপ্ত গ্রন্থিকোষ বৃদ্ধির জন্য অত্যন্ত কার্যকরী। তাই যদি আপনার চুলের ঘনত্ব পাতলা হয়ে থাকে তাহলে ঘন চুল পেতে মধু ব্যবহার করুন এটি চুল উজ্জ্বল করবে। চুলের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধির জন্য তিন চামচ মধুর সাথে দুই চামচ পানি মিশিয়ে ভেজা চুলে একঘন্টা রেখে ধুয়ে ফেলুন এতে করে চুলের চাকচিক্য ফিরে আসবে।
মুখের ব্রণ দূর করতে
যাদের মুখে অত্যাধিক ব্রণ রয়েছে তারা বিভিন্ন ধরনের মেডিসিন ক্রিম ব্যবহার করেছেন এতে দেখা যায় ব্রণ আরো দিন দিন বেড়ে যায়। আমি নিজেও আমার মুখের ব্রণের সমস্যায় পড়েছি অনেক মেডিসিন ক্রিম ব্যবহার করেছি কোন লাভ হয়নি। তারপর একজনের কাছ থেকে শুনি মুখের ব্রণ দূর করতে নাকি মধু ব্যবহার করা যায়। আপনিও ব্যবহার করতে পারেন আশা করি ভালো ফল পাবেন এর জন্য আপনি ইউটিউব গুগোল সার্চ করতে পারেন মধুর পুষ্টিগুণ ও উপকারিতা সম্পর্কে জানার জন্য
আরও পড়ুন
- পানি খাওয়ার নিয়ম জেনে নিন
- আমলকির উপকারিতা ও অপকারিতা
- যবের ছাতুর উপকারিতা এবং যবের ছাতু খাওয়ার নিয়ম
- গ্রিন টি এর উপকারিতা ও অপকারিতা এবং খাওয়ার নিয়ম
- রাতের খাবার কেমন হওয়া উচিৎ?
- শসার উপকারিতা ও অপকারিতা
- খাবার খাওয়ার পরপরই চা পান, ভালো নাকি খারাপ
- কামরাঙ্গা খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা, যে বিষয়গুলো না জানলে বিপদ
- তরমুজের উপকারিতা ও অপকারিতা, ১০ টি দুর্দান্ত উপকারিতা
- কলা খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা, কলা খাওয়ার নিয়ম
2 Comments